
বিএনপি দাবি করেছে যে, গত ১৬ বছরে সারাদেশে ২,২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মতে, সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায়। এই জেলায় ২০০৮ সাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২০০টি ক্রসফায়ার ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরে সবচেয়ে কম, মাত্র একটি ক্রসফায়ার হয়েছে। তবে, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, বান্দরবান, নওগাঁ, পঞ্চগড় এবং পিরোজপুর এই তালিকায় নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে ৯ জানুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেন দলের মামলা, গুম ও খুন বিষয়ক সমন্বয়ক মো. সালাহউদ্দিন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম জাহিদ। একই সঙ্গে, ১৫৩ জন গুমের অভিযোগও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে বিএনপি।
এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগের পর সালাহউদ্দিন খান একটি তালিকা প্রকাশ করেন, যেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার নাম ছিল না।
রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী মহানগরে ৪৩, সিরাজগঞ্জে ৪২, পাবনায় ৪৪, বগুড়ায় ১৭, রাজশাহীতে ৩৩, নাটোরে ২১, জয়পুরহাটে ২৬ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে নওগাঁ জেলার তথ্য তালিকায় নেই। খুলনা বিভাগে যশোরে ৮৮, সাতক্ষীরায় ৫১, মেহেরপুরে ৩৭, নড়াইলে ৮, চুয়াডাঙ্গায় ১৬, কুষ্টিয়ায় ৬২, মাগুরায় ১১, খুলনায় ৫৪, বাগেরহাটে ২৮ এবং ঝিনাইদহে ৫৯ জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠিতে ২, পটুয়াখালীতে ৯, বরিশালে ১১, ভোলায় ১২ এবং বরগুনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পিরোজপুর জেলার তথ্য নেই। সিলেট বিভাগের সিলেটে ১১, মৌলভীবাজারে ৫, হবিগঞ্জে ৬ এবং সুনামগঞ্জে ৪ জনের নাম আছে। ঢাকা বিভাগের ঢাকা মহানগরে ৫২, নরসিংদীতে ১১, গাজীপুরে ২১, শরীয়তপুরে ৮, নারায়ণগঞ্জে ১৫, টাঙ্গাইলে ১৫, কিশোরগঞ্জে ৭, ঢাকায় ৮, মুন্সিগঞ্জে ২৬, রাজবাড়ীতে ১১, মাদারীপুরে ৬, ফরিদপুরে ২৭ জনের নাম রয়েছে। তবে গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের তথ্য এখানে নেই।
রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অপহরণ, নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। মির্জা ফখরুল আলমগীর দাবি করেছেন, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ও কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০০৭ সালে মঈন ইউ আহমেদ এবং কিছু বাহিনীর সহায়তায় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে। ২০১৮ সালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, অপহরণ, এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনকালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, গুম ও মিথ্যা মামলা করা হয়, এবং ক্রসফায়ারের নামে ২,২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়।
আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বর্বরতার বিচার দাবি করে বিএনপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।