
যুক্তরাজ্য বা ইউরোপে এমপি বা মন্ত্রীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শপথ করানো হয়, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত কারণে অন্য কোনো দেশের হয়ে কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ রেহানার মেয়ে ও শেখ হাসিনার ভাগ্নি, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। তিনি লেবার পার্টি ও কো-অপারেটিভ পার্টির সদস্য এবং ২০১৫ সালে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ক্যামডেন কাউন্সিলে সংস্কৃতি ও কমিউনিটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি ২০২৪ সালের ৯ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রেজারির অর্থনৈতিক সেক্রেটারি ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে মন্ত্রী থাকাকালীন কীভাবে তিনি দিনের পর দিন ‘বাংলাদেশ’কে ব্যবহার করেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ২০১৫ সালে টিউলিপের রাজনৈতিক সাফল্যের যাত্রা শুরু হলেও, হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর তার বিরুদ্ধে ঢাকার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
বিনা টিকেটে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা, ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া, ও সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে টিউলিপকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে, এবং তার পদত্যাগের চাপ বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত, গতকাল মঙ্গলবার তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা স্টারমার নিজে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন।
প্রিয় টিউলিপ, আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। দুঃখের সঙ্গে আপনার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের বিষয়টি গ্রহণ করলাম। সিটি মিনিস্টার হিসেবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
টিউলিপ সিদ্দিক টানা তিনবার এমপি এবং ২০১৬ থেকে ছায়া শিক্ষামন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম নির্বাচনে গ্লেন্ডা জ্যাকসনের আসনে জয়ী হয়ে মাত্র ১১৩৮ ভোটে জিতেছিলেন। পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যা ও তার পরিবারের রিফিউজি জীবনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ব্রেক্সিটে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করে ২০১৭ সালে নিজের সিটকে মার্জিনাল থেকে সেফ সিটে পরিণত করেন, ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ১৫,৫৬০।
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ রাজনীতিতে সক্রিয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সমর্থন নেওয়ার অভিযোগ উঠে।
টিউলিপ এক সভায় সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তাদের সাহায্য ছাড়া তিনি জিততে পারতেন না। তিনি আগে আওয়ামী লীগের শাখাগুলোর জন্য কাজের কথা স্বীকার করেন। এছাড়া, ২০১৫ সালে সিআরআই-এর এক অনুষ্ঠানে খালার নেতৃত্বের প্রশংসা করলেও পরে বাংলাদেশি রাজনীতি থেকে দূরত্বের কথা বলেন।
২০২৪ সালে হাসিনা সরকারের পতনের পর, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের অভিযোগে দুদক টিউলিপের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের তদন্ত শুরু করে। টিউলিপ লন্ডনে স্বামী ক্রিস পার্সি এবং তাদের এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গুঞ্জন রয়েছে যে, শেখ হাসিনার সহায়তায় ক্রিস পার্সি বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণার জন্য বড় অংকের অর্থ পেয়েছিলেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।