
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি জানান, আমরা একটি পথ তৈরি করে যাচ্ছি, যা নিশ্চিত করবে যে, ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, পাবলিক বা প্রাইভেট খাতে অর্থ পাচার করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করছি, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি মাপকাঠি হিসেবে থাকবে, যাতে পরবর্তী সরকার সেগুলো অনুসরণ করতে পারে।
শনিবার দুপুরে মেরুল বাড্ডায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতিতে যে ধরনের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা বাইরে থেকে সহজে অনুমান করা সম্ভব নয়। তিনি মন্তব্য করেন, বিশ্বের অন্য কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে আমাদের অবস্থার তুলনা সম্ভব নয়। তবুও, দেশের যে সীমিত উন্নতি হয়েছে, তাতে কৃষকদের অবদান অসামান্য। অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের উন্নয়ন কৌশল ভুল ছিল। অর্থনীতিতে শুধু উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শন করা ছিল, যা পরিবর্তন করা দরকার।
বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পরও দাম না কমার জন্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চাঁদাবাজি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তাদের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। আমরা এই সমস্যা কমানোর জন্য কাজ করছি। এছাড়াও, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উন্নয়ন বয়ানের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, যদি আমরা উন্নয়নের যে ধারণা দেওয়া হচ্ছে, তার গভীর বিশ্লেষণ না করি, তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, উন্নয়ন কৌশলের সমস্যাটা হলো— যে প্রবৃদ্ধির চিত্র আমাদের দেখানো হচ্ছে, সেখানে তথ্যের রাজনৈতিক রং চড়ানো হয়েছে। এর ফলে, দেখা যাচ্ছে জিডিপি বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তথ্য-উপাত্তের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, এতো জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু ট্যাক্স জিডিপি বাড়ছে না। বছরের পর বছর এটি ৮-৯ শতাংশে আটকে রয়েছে। এত টাকা কোথায় যাচ্ছে? বিগত সময়ের বিভিন্ন খাতের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে প্রশ্ন করছে, আমরা কি মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছি? আমার বিশ্বাস, আমরা ইতোমধ্যে ওই ফাঁদে আটকে পড়েছি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিশ্বাস করেন, দেশে একটি ‘অ্যান্টি রিফর্ম’ এবং ‘প্রো করাপশন’ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দুটি প্রধান খাত—আর্থিক এবং শক্তি—সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়ে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গে, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথমে বিনিময় হার, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।